মঙ্গলে বাড়ি তৈরির জন্য অন্তরীক্ষ ইট বানিয়ে চমকে দিলেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা

মঙ্গলে বাড়ি তৈরির জন্য অন্তরীক্ষ ইট বানিয়ে চমকে দিলেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা

দৈনিক সংবাদ অনলাইন।।  অদুর ভবিষ্যতে সৌরমণ্ডলের লাল গ্রহ মঙ্গলে তৈরি হবে লাল ঘরবাড়ি। পৃথিবী থেকে মানুষ হয়তো সেখানে গিয়ে  বসতি স্থাপন করবেন।  কিন্তু পৃথিবীতে যেমন পোড়া মাটির ইট দিয়ে বাড়ি বানানো যায়, মঙ্গলে তো আর সেটি যাবেনা।  মঙ্গলের বাড়ি তৈরির জন্য ইট হতে হবে অন্যরকম।সেই বিশেষ ধরনের অন্তরীক্ষইট বানিয়ে বিশ্বকে কার্যত চমকে দিলেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা।  বেঙ্গালুরু কেন্দ্রাইক ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এবং ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন তথা ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর বিজ্ঞানীরা মিলেমিশে তৈরি করে ফেলেছে অন্তরীক্ষ ইট বা মহাকাশ ইট। এই ইট তৈরিতে ভারতীয় বিজ্ঞানীরা কাচামাল হিসাবে ব্যবহার করেছেন মঙ্গলগ্রহের স্টিমুল্যান্ট মাটি( এমএসএস)এবং তার সঙ্গে ইউরিয়া। বিজ্ঞানিরা দাবি করেছেন, এই ধরনের অন্তরীক্ষ ইট মঙ্গলগ্রহে স্থায়ী নির্মানের কাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। শেষপর্যন্ত এই ইট দিয়েই মঙ্গলে মানুষের বসবাসের জন্য ঘরবাড়ি বানানো যেতে পারে। সায়েন্স জার্নাল প্লজ ওয়ান এ ভারতাইয় বিজ্ঞানীদের এই সংক্রান্ত গবেষণাপত্রটি সদ্য প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বিজ্ঞানিরা স্পেস ব্রিকস তৈরির পদ্ধতি শিখিয়েছেন।কী ভাবে? গবেষনাপাত্রে বলা হয়েছে,  মঙ্গলের মাটিতে থাকা স্পেরোসারসিনা পাস্তুরি নামের একধরনের ব্যক্টেরিয়া বা ছত্রাক,তার সঙ্গে ইউরিয়া, নিকেট ফ্লোরাইড এবং গুয়াম গম মিশিয়ে একটি দ্রবণ তৈরী করতে হবে। সেই দ্রবণটিকে কাচা অবস্থাতেই কয়েক দিনের মধ্যে একটি ছাঁচে ফেলে দিতে হবে।  সেই  ছাঁচেও থাকতে হবে ব্যক্টেরিয়া।তারপর ইউরিয়াকে ক্যলসিয়াম কার্বোনেটের ক্রিস্টালে রূপান্তরিত করতে হবে। সেই ক্রিস্টালগুলি আবার ব্যক্টেরিয়া থেকে নিঃসৃত বায়োপলিমার মঙ্গলের মাটির কণাগুলির সঙ্গে নিজেকে আটকে ফেলবে।বিজ্ঞানিরা বলছেন,  এই পদ্ধতিতে মহাকাশ ইট তৈরির একটি সুবিধা হল,  ইটগুলির ঘনত্ব হবে কম। এই ইটে সঠিক পরিমাণে মাটি ও জলের মিশ্রন থাকবে। মঙ্গলের মাটিকে ইটে রূপান্তরিত করতে হলে এছাড়া গত্যন্তর নেই বলে দাবি করছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের মেকানিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারি অধ্যাপক তথা গবেষণাপাত্রের অন্যতম লেখক অলোক কুমার বলেছেন,  ব্যক্টেরিয়া তাদের নিজস্ব প্রোটিন ব্যবহার করে মাটির কণাকে একসঙ্গে জমাট করে রাখে।  এর ফলে পেরোসিটি কমে। ফলে তৈরি হয় শক্তিশালী ইট। ঘটনা হলো চাঁদের কণামাটিকে ব্যবহার করেও এই জাতীয় অন্তরীক্ষ ইট তৈরি করা হয়েছিল। সেই ইট তৈরি করতেও বিজ্ঞানিরা একই পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন। তবে আগের পদ্ধতিতে শুধুমাত্র নলাকার ইট তৈরি করা সম্ভব হয়েছিল। সেখানে মঙ্গলের মাটির জন্য উপযুক্ত অন্তরীক্ষ ইট তৈরির সময় স্লারি ঢালাই প্রযুক্তির কথা মাথায় রেখেছিলেন বিজ্ঞানিরা। বিজ্ঞানিরা বলেছেন, এই ইটের আকৃতি তুলনায় জটিল প্রকৃতির। স্লারি ক্লাস্টিং পদ্ধতিটি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সের মেকানিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কৌশিক বিশ্বনাথনের সহায়তায় তৈরি করা হয়েছে বলে গবেষণাপাত্রে জানানো হয়েছে। সেখানে অধ্যাপক বিশ্বনাথন ব্যখ্যা করেছেন, এই পদ্ধতিতে মঙ্গলের মাটি ব্যবহার করে  ইট তৈরি করাটা রীতিমতো চ্যলেঞ্জের কাজ ছিল। তার কারণ মঙ্গলগ্রহের মাটিতে প্রচুর পরিমানে লোহা (এফই কনটেন্ট)রয়েছে, যা চারপাশে এক বিষাক্ত পরিবেশ  তৈরি করে। ইট তৈরির প্রথমদিকে সহজে ওই মাটিতে ব্যক্টেরিয়া জন্মাতে পারছিল না। কিন্তু নিকেল ক্লোরাইড যোগ করতেই মঙ্গলের মাটিতেও ব্যক্টেরিয়া জন্মাতে শুরু করে। প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক,মঙ্গলে পৃথিবীর মতো জোরাল মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই।  সেখানে মাধ্যাকর্ষণ কম। বায়ুমন্ডলের চাপও কম। পৃথিবীর তুলনায় মঙ্গলের বায়ুমন্ডল ১০০ গুন বেশি পাতলা। তার উপর মঙ্গলে পৃথিবীর তুলনায় ৯৫শতাংশ বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড রয়েছে, যা ব্যক্টেরিয়ার বৃদ্ধিতে দ্রুত ত্বরান্বিত করতে পারে। গবেষকরা মার্টিয়ান  অ্যাটমসস্ফিয়ার স্টিমুলেটর নামে একটি যন্ত্র আবিস্কার করেছেন। সেই যন্ত্রে কৃত্রিম উপায়ে মঙ্গলের বায়ুমন্ডল তৈরি করা যায়।

সম্পরকিত খবর