বিয়ের জন্য মহিলাদের হাতে মার খান পুরুষেরা, আজব মেলা রাজস্থানে।

বিয়ের জন্য মহিলাদের হাতে মার খান পুরুষেরা, আজব মেলা রাজস্থানে।

দৈনিক সংবাদ অনলাইন।।  কোনও সন্দেহ নেই এটাই গোটা বিশ্বের সবচেয়ে চমকপ্রদ মেলা । যে মেলা অনুষ্ঠিত হয় শুধুমাত্র যোধপুর শহরের ১১ টি পাড়ায় । মেলার সেরা আকর্ষণ তথা বৈশিষ্ট্য হল , মেলায় অংশ নেওয়ার আগে ১৬ দিন ধরে বিবাহিত মহিলারা কঠোর ব্রত পালন করেন । সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাসে থাকেন । পুজো করেন পনেরো দিন । তারপর মেলায় আসেন কনের সাজে সেজে । যুবক বয়সের ছেলেরাও আসেন বরের সাজে । বউদি স্থানীয় মহিলারা নিজের দেওর এবং দেওর - স্থানীয় অন্যান্য অবিবাহিত যুবকদের স্নেহপরবশে মৃদু লাঠিপেটা করেন । উদ্দেশ্য , লাঠিপেটা করে অবিবাহিত ছেলেটির গা থেকে অশুভ শক্তিকে তাড়িয়ে শুভ শক্তিকে ডেকে আনার প্রার্থনা করা । শুভ শক্তি মানে ? অবশ্যই স্ত্রী ! লোকবিশ্বাস , এই মেলায় বউদিদের হাতে লাঠিপেটা খাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই সেই ছেলেটির বাড়িতে বিয়ের সানাই বেজে ওঠে । শুধু তাই নয় , লাঠিখাওয়া যুবকটির জীবনে আসে তার ‘ মনমতো ’ স্ত্রী । যে পুরুষ লাঠির ঘা খান , তিনি নিজেকে সৌভাগ্যবান বলে মনে করেন । কারণ সব পুরুষের কপালে লাঠির আঘাত জোটে না যে !
মেলার নির্দিষ্ট একটি দিনে মহিলাদের হাতে মার খান পুরুষেরা । সেই রাতে মেলার আশপাশের রাস্তাঘাটে শুধু মহিলাদেরই দেখা যায় । নানা সাজে তারা সেজে মেলায় আসেন । কেউ সাজেন বিয়ের কনের সাজে । কেউ আবার বিভিন্ন হিন্দুদেবীর সাজে । কোনও মহিলা আবার পুলিশের মতো সাজেন , কেউ সাজেন ডাকাত , কেউ উপজাতি । কড়া পুলিশি ব্যবস্থার মধ্যে প্রত্যেক মহিলা হাতে লাঠি নিয়ে মেলা চত্বরে প্রবেশ করেন । অর্ধপরিচিত অবিবাহিত যুবক দেখলেই তাকে লাঠিপেটা করেন । পুরুষেরাও ওই রাতে বউদিস্থানীয় মহিলাদের হাতে লাঠির ঘা খাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে থাকেন । বিশেষত যে সব যুবক প্রেমের সম্পর্কে রয়েছেন , তাদের বিশ্বাস মহিলাদের হাতে লাঠির ঘা খেলে নির্ঘাৎ খুব তাড়াতাড়ি সামাজিক ভাবে প্রেমিকার সঙ্গে তার চার হাত এক হবে । ১৬ দিন ধরে মেলা চলে । ১৬ দিন ধরে মা ধিঙ্গা গভারের পুজো করা হয় । পনেরো দিন ঘরে মা গভারের পুজো করার পর ১৬ তম দিনে তারা কনের সাজে সেজে , হাতে লাঠিসোটা নিয়ে মেলায় যান । সেদিন সারা রাত ঘরের বাইরে থাকেন বাড়ির বধূরা । রাতভর শহরের রাস্তায় ঘুরে বেড়ান । তবে তার আগে মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে মা গভারের বিগ্রহের সামনে সন্ধ্যারতি করেন । রাজস্থানী ভাষায় ধিঙ্গা শব্দটির অর্থ প্রতারণার দ্বারা মজা করা । আর গভর কথাটির অর্থ গঙ্গৌর , আরও ভেঙে বললে শিবের সহধর্মিনী । মা ধিঙ্গা গভরের বিগ্রহের গায়ে থাকে কমপক্ষে ৫ থেকে ৩০ কিলো সোনার গয়না । গঙ্গৌররূপী দুর্গাপুজোর চল ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে চালু থাকলেও ধিঙ্গা গভর পুজোর চল একমাত্র যোধপুরে। বিশ্বের মধ্যে রাজস্থানের যোধপুর একমাত্র শহর যেখানে মা ধিঙ্গা গভারের পুজো করা হয় । রাজস্থানের জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তো বটেই , এই মেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পর্যটকেরাও এসে ভিড় করেন । ১৪৫৯ সালে রাও যোধা যোধপুর শহরের পত্তন করেন । সেই বছর থেকে আজও প্রতি বছর দোল পূর্ণিমার পরদিন থেকে মা ধিঙ্গা গভারের মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে চলেছে । অর্থাৎ এই মেলার বয়স ৫৬৩ বছর । ভক্তদের বিশ্বাস , মা দুর্গা যখন সতী হয়ে দ্বিতীয় জন্ম নেন , তখন তিনি ধিঙ্গা গভার রূপে মর্ত্যে আসেন । দিনের বেলায় মা ধিঙ্গা গভার গৃহস্থের বাড়িতে ঢুঁ মারেন । সেখানে ‘ সতী’দের তিনি নিজের হাতে আশীর্বাদ করেন । যে ‘ সতী ’ মায়ের আশীর্বাদ পান , তার সংসার ফুলে - ফলে ভরে ওঠে । আর সেই ‘ সতী’র হাতে যে অবিবাহিত পুরুষেরা বউদিদের হাতে লাঠির ঘা খান , তাদের জীবনেও ‘ সতী’র আগমন ঘটে অচিরে । মেলা শুরু হলে প্রথম দিন থেকে পরবর্তী পনেরো দিন বাড়ির সধবা স্ত্রীরা শুধু রাতে আহার করেন । সেই সঙ্গে মা ধিঙ্গা গভারের বিগ্রহের সামনে প্রতিদিন মিষ্টান্ন নিবেদন করেন । দিনে উপবাসে থাকেন । অনেকটা ইসলামে যেমন রমজান মাসে রোজার উপবাস করা হয় ।

সম্পরকিত খবর