ভোটের দামামা কাশ্মীরে।

ভোটের দামামা কাশ্মীরে।

দৈনিক সংবাদ অনলাইনঃ  জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখকে কেন্দ্রীয় সরকার পৃথক দুইটি  কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসাবে ঘোষণা দেওয়ার প্রায় তিন বছর পর এবার জম্মু কাশ্মীরে ভোটের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে । প্রথমে ৩৭০ ধারা এবং ৩৫ এ অনুচ্ছেদ বিলুপ্তি এবং রাজ্য হিসাবে জম্মু - কাশ্মীরের মর্যাদার অবনমন ঘটানোর পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক জম্মু - কাশ্মীরের পুনর্গঠন বিষয়ক একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে শুরু করেন । তারই অন্যতম ছিল জম্মু - কাশ্মীরের বিধানসভার আসনগুলোর এলাকা পনবিন্যাসের জন্য ডিলিমিটেশন কমিশনকে দায়িত্ব নেওয়া । দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পর বিধানসভার আসনগুলোর এলাকা পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ডিলিমিটেশন কমিশন । বৃহস্পতিবার কমিশন এই সংক্রান্ত চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরই রাজনৈতিক মহল একরকম নিশ্চিত , এবার বাস্তবিক অর্থেই জম্মু - কাশ্মীরে ভোটের বাজনা বেজে উঠলো । বিধানসভা আসনগুলোর এলাকা পুনর্বিন্যাস সংক্রান্ত ডিলিমিটেশন কমিশনের চূড়ান্ত রিপোর্ট অনুযায়ী , জম্মু - কাশ্মীরে মোট ৫ টি লোকসভা আসনের জন্য এখন থেকে সমান সংখ্যায় ১৮ টি করে বিধানসভা আসন থাকবে । বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী , ৯০ আসন বিশিষ্ট জম্মু - কাশ্মীর বিধানসভার মধ্যে জম্মু অঞ্চলের জন্য থাকবে ৪৩ টি আসন এবং কাশ্মীর অঞ্চলের জন্য থাকবে ৪৭ টি আসন । এই প্রথমবারের মতো জম্মু কাশ্মীর বিধানসভায় মোট ৯ টি আসন তপশিলি উপজাতি অংশের জনগোষ্ঠীর জন্য সংরক্ষিত থাকবে । এছাড়া পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে আসা এবং কাশ্মীরি বিভিন্ন পরিযায়ীদের জন্যও আসন সংরক্ষণের কথা ডিলিমিটেশন কমিশন তার চূড়ান্ত রিপোর্টে উল্লেখ করেছে । কিন্তু জম্মু - কাশ্মীরে কেন্দ্রীয় সরকার ভোটের দামামা বাজিয়ে দিলেও ডিলিমিটেশন সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক বিতর্ক থেকে  কেন্দ্রীয় সরকার নিজেকে মুক্ত রাখতে পারেনি । প্রথমত , জম্মু কাশ্মীর পুনর্গঠন আইনে এটা স্পষ্ট করা হয়েছিল যে , ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারেই জম্মু - কাশ্মীরের বিধানসভার আসনের এলাকা বিন্যাস হবে । অর্থাৎ জনসংখ্যার নিরিখেই হবে এলাকা বিন্যাসের কাজ । যার অর্থ দাঁড়ায় জম্মু - কাশ্মীরের রাজনৈতিক পরিস্থিতি , ভৌগোলিক অবস্থান এবং সমাজের নানা স্তরের প্রতিনিধিত্বের কথা মাথায় চিন্তা করেই ডিলিমিটেশন চূড়ান্ত করা হবে । কিন্তু ডিলিমিটেশন কমিশনের খসড়া রিপোর্ট প্রকাশের পর প্রায় সবগুলো বিরোধী রাজনৈতিক দলের পক্ষে অভিযোগ তোলা হয়েছিল , কেন্দ্রীয় সরকারে আসীন শাসককে রাজনৈতিক সুবিধা পাইয়ে দিতে জম্মু - কাশ্মীরে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর মানুষকে রাজনৈতিক সংখ্যালঘুতে পরিণত করতে কৌশলে ডিলিমিটেশনের এলাকা বাছাই করা হয়েছে ।এবার   কমিশনের চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশ হতেই দেখা যায় ইতিপূর্বে উত্থাপিত বিরোধীদের অভিযোগের নিরসন না করেই একতরফাভাবেই ডিলিমিটেশন কমিশন নিজেদের সিদ্ধান্তে অবিচল থেকেছে । আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে যে , এই নিজেদের সিদ্ধান্তে অবিচল থাকার বিষয়টি আদৌ ডিলিমিটেশন কমিশনের , নাকি খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর । কারণ সবচেয়ে বড় বিতর্কের জায়গা তৈরি হয়েছে জম্মু লোকসভা কেন্দ্রের পুঞ্চ এবং রাজৌরির সঙ্গে দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ বিধানসভাকে জুড়ে দেওয়ার ঘটনায় । যদিও কমিশন যুক্তি দেখাচ্ছে লোকসভার আসনে সমান সংখ্যক বিধানসভার কেন্দ্র জুড়ে দিতেই এটা করা হয়েছে । কিন্তু যেটা সবচেয়ে বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হচ্ছে তা হলো , পুঞ্চ আর রাজৌরির সঙ্গে কোনভাবেই ভৌগোলিক মধ্যবর্তী সীমানা কিংবা অন্যকোন যোগসূত্র নেই অনন্তনাগের । এই দুই স্থানের দূরত্ব পাঁচশ কিলোমিটারের বেশি । অর্থাৎ ভৌগোলিক ও জনসংখ্যার বন্টনকে উপেক্ষা করেই বিধানসভা আসনের এলাকা বিন্যাসের উদ্দেশ্যটা কী ? তাহলে বিজেপির অ্যাজেন্ডা মেনেই কেন্দ্রের শাসককে জম্মু - কাশ্মীরের ভোটে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দিতে ডিলিমিটেশন কমিশনের এই নগ্ন খেলা ; সেটা না হয় বোঝা গেল । কিন্তু তাই বলে দেশে আইন , সংবিধান , সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠীর মতামত কিছুই মূল্য পাবে না রাজনৈতিক অ্যাজেণ্ডার কাছে ? এটা কি মানবাধিকার থেকে জম্মু - কাশ্মীরকে বঞ্চিত করা নয় ? ২০১৮ এর জুন থেকে জম্মু - কাশ্মীরে কোনও নির্বাচিত সরকার নেই । তাই সেখানে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গণতান্ত্রিক সুস্থিরতা ফিরে আসুক এটা সকলেই চান । তাই ডিলিমিটেশন কমিশনের বৃহস্পতিবারের চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিলের সঙ্গে সঙ্গেই জম্মু - কাশ্মীরে বিধানসভা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরুর ক্ষেত্রে আর যে কোনও বাধা রইলো না সেটা একপ্রকার স্পষ্ট । দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন শীঘ্রই জম্মু জম্মু - কাশ্মীরের হারানো মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে । এখন সেই কাশ্মীরে বিধানসভার নির্বাচন করানো হবে এবং ভোটের পর পরই প্ৰক্ৰিয়া কত দ্রুত শুরু করা যায় সেদিকেই তাকিয়ে আছেন গণতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসী মানুষ ।

সম্পরকিত খবর