স্ত্রীর কঙ্কালের সঙ্গে ২১ বছর ধরে সংসার বৃদ্ধের !

স্ত্রীর কঙ্কালের সঙ্গে ২১ বছর ধরে সংসার বৃদ্ধের !

দৈনিক সংবাদ অনলাইনঃ  নিদারুণ বললেও এই ঘটনাকে অনেক কম বলা হয় । দীর্ঘ ২১ বছর ধরে স্ত্রীর কঙ্কালের সঙ্গে এক ঘরে বসবাস করে অবশেষে ‘ স্ত্রী’কে চিরবিদায় জানালেন থাইল্যান্ডের এক বৃদ্ধ ।
কয়েক বছর আগে কলকাতার অভিজাত পাড়া রবিনসন স্ট্রিটে দিনের পর দিন মা ও বোনের মৃতদেহের সঙ্গে বসবাস করছিলেন ৪৬ বছরের পার্থ দে । সেই ঘটনা গোটা দেশের সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিল । তবে থাইল্যান্ডের এই ঘটনা আরও নিদারুণ , আরও শিউরে ওঠার মতো । পার্থ তার মৃত মা ও বোনকে বাড়িতে ‘ আগলে ’ রেখেছিলেন ছয় মাস । সেখানে এই বৃদ্ধ একুশটা বছর ঘরে কাটিয়েছেন কঙ্কালের সঙ্গে।বৃদ্ধের নাম চার্ন জানওয়াতচাকাল । এখন তার বয়স ৭২ বছর । একুশ বছর আগে তার স্ত্রী মারা যান । কিন্তু বৌদ্ধ ধর্মালম্বী চার্ন স্ত্রীর দেহ দাহ করেননি । স্ত্রীর প্রতি প্রবল ভালবাসার টানে মৃতদেহ বাড়িতেই আগলে রেখে দেন তিনি । ঠিক করেছিলেন , যত দিন বাঁচবেন , স্ত্রীকে ‘ সঙ্গে ’ নিয়েই বাঁচবেন । মৃত্যুর কিছুদিনের মধ্যেই স্ত্রীর দেহে পচন ধরে । ক্রমে উপরের ত্বক ও মাংস গলে গিয়ে তা কঙ্কালের আকার নেয় । তবু স্ত্রীকে ‘ বিদায় ’ দেওয়ার কথা ভাবেননি তিনি । আর পাঁচজন বৃদ্ধের মতোই ‘ স্ত্রী’কে নিয়ে ঘরে থাকতেন । স্ত্রী খেতে ভালবাসেন এমন সব জিনিস বাজার করেও ঘরে নিয়ে আসতেন। এমনকী কঙ্কালের সঙ্গে একান্তে কথাও বলতেন। ঘরের ভিতর এমন ধুন্ধুমার চললেও আশ্চর্যের বিষয় হল পাড়া প্রতিবেশীরা কিছুই টের পাননি ।
প্রশ্ন জাগে তা হলে এক বছর বাদে চার্ন স্ত্রীয়ের কঙ্কাল সৎকার করলেন কেন ? স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন , সম্প্রতি তিনি উপলব্ধি করেন তারও বয়স বাড়ছে । শরীরটাও ক্রমে অশক্ত হয়ে আসছে । তার উপর শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ - ব্যাধি । এমন অবস্থায় যে কোনও দিন নীরবে মৃত্যু ঘটতে পারে তারও । তেমনটা ঘটে গেলে অর্থাৎ তিনি নিজেই মরে গেলে প্রাণাধিক প্রিয় স্ত্রীয়ের শেষকৃত্য কে করবেন ! শেষ পর্যন্ত সম্প্রতি এলাকার একটি এনজিওকে গোটা বিষয়টি খুলে বলেন চার্ন । তার পরেই ভয়াবহ এই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসে । জানা যায় , ঘরের মধ্যে স্ত্রীর কঙ্কালকে একটি কফিনে বন্দি করে রেখেছিলেন চার্ন । শেষ পর্যন্ত বৃদ্ধের দৃঢ় ধারণা ছিল , স্ত্রী নাকি কঙ্কালের শরীর নিয়ে ' বেঁচে ' আছেন!
এই ঘটনার সঙ্গে অনেকে আমেরিকার ফ্লোরিডার মেরিন হাসপাতালে কার্ল ট্যাঞ্জলারের ঘটনার সঙ্গে মিল পাচ্ছেন । জার্মান বংশোদ্ভূত কার্ল মেরিন হাসপাতালে রেডিয়োগ্রাফি টেকনোলজিস্ট হিসাবে কর্মরত ছিলেন । ১৮৭৭ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি ওই হাসপাতালের কর্মী ছিলেন । ১৯৩০ সালে সেখানে হেলেন নামে এক কিউবান আমেরিকান রোগিণীর সঙ্গে তার পরিচয় হয় । হেলেন কঠিন যক্ষায় ভুগছিলেন । তার পরিচর্যার দায়িত্ব নেন কার্ল । ১৯৩১ সালে হেলেন মারা যান । কিন্তু তার পরেও ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত হেলেনের দেহ হাসপাতালে সকলের অগোচরে তিনি সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন । লোক জানাজানি হয়ে গেলে পরে তিনি হেলেনের কঙ্কাল বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং সাত বছর সেই কঙ্কাল নিয়ে ‘ ঘর ’ করেছিলেন । ১৯৪০ সালে আত্মীয় - পরিজনদের চাপে কোনও এক অজানা স্থানে সকলের অগোচরে হেলেনের কঙ্কালকে কফিনে বন্দি করে কবর দেন কার্ল ।

সম্পরকিত খবর