গেরুয়া নাকি সবুজ- জল্পনা বহাল সৌরভকে নিয়ে

গেরুয়া নাকি সবুজ- জল্পনা বহাল সৌরভকে নিয়ে

দৈনিক সংবাদ অনলাইনঃ   তৃণমূলের বাংলায় বিজেপি নেতা ও কেন্দ্রীয় মঙ্গার এলাহি নৈশভোজ সারা নিয়ে গত শুক্রবার বেজায় সরগরম ছিল জাতীয় তথা বাংলা রাজ্যরাজনীতি । নৈশভোজ সেরে অমিত শাহ কলকাতা ছেড়ে রওনা হয়ে গেলেও , পিছনে রেখে গিয়েছেন যদি - কিস্তর রাজনৈতিক সমীকরণ । আর সেই রাজনৈতিক সমীকরণের কেন্দ্রবিন্দুতে যিনি আছেন , তিনি এলেবেলে কেউ নেই , ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বর্তমান সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় । শনিবারও জল্পনার সেই রেশ বিদ্যমান । একুশের বিধানসভা নির্বাচন থেকেই সৌরভকে পদ্ম শিবিরে নিয়ে যাওয়া নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বের হুড়োহুড়ির খবর মাঝেমধ্যেই গাঝাড়া দিয়ে ওঠে । গত বিধানসভা নির্বাচনে বেজায় মুখ পুড়লেও , এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে সৌরভের শনিবার ও নেই যে সৌরভের  স্টার পাওয়ারকে  কাজে লাগিয়ে  বাংলায় বিজেপি জমি শক্ত করতে মরিয়া , সে যেভাবেই হোক । আর বরাবরই কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্বের সৌরভকে নিয়ে একটা সফ্ট কর্নার রয়েছে । সেসঙ্গে এটাও সত্যি যে অমিত শাহের ছেলে জয় শাহের সঙ্গে সৌরভের দহরমমহরম বহুদিনের । সৌরভ বিসিসিআই বোর্ড সভাপতি হওয়ার পর থেকে সেটা আরও বেড়েছে বৈকী ।ক্রিকেট পরবর্তী অবসর জীবনে ক্রীড়া প্রশাসকের ভূমিকায় সৌরভ নিজের দক্ষতা দেখিয়ে দিয়েছেন । এখন নানা মহলে প্রশ্ন , তাহলে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে কবে নামছেন দাদা ? একুশে হয়নি , তাহলে আসছে চব্বিশে কি হবে ? বিশেষজ্ঞ মহলের অনেকেই বলে থাকেন , সৌরভ যেভাবে গা বাঁচিয়ে চলতে জানেন , তাতে রাজনীতিটা তিনি ভালোই পারবেন । শনিবার যেন সেই আভাসই মিলেছে সৌরভের স্ত্রী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের গলায় । সরাসরি খোলসা না করলেও , তার বক্তব্য “ রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে , সেটা সৌরভ নিজেই নেবেন । সৌরভ রাজনীতিতে আসবে কিনা আম জানি না । তবে ও রাজনীতিতে এলে ভালোই করবে । মানুষের জন্য ভালো কাজ করবে । ” সেসঙ্গে ডোনা এটাও দাবি করেছে , “ শুক্রবার রাতে অমিত শাহের সঙ্গে কোনওরকম রাজনৈতিক আলোচনা হয়নি সৌরভের । ” রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের বক্তব্য , এটাও মাথায় রাখতে হবে যে অমিত শাহ যেমন সৌরভের বাড়িতে গিয়ে নৈশভোজ সেরেছেন , তেমনই তিনি সৌরভের স্ত্রীর নাচের অনুষ্ঠানও ভিক্টোরিয়াতে দেখতে গিয়েছিলেন ব্যস্ত কর্মসূচির মধ্যেও । তাই দু’পক্ষেরমধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতার সমীকরণ এখনই নাকচ করে দেওয়া । এদিকে , যাকে নিয়ে এতো কথা , সেই তিনি অমিত শাহের সঙ্গে এক টেবিলে বসে নৈশভোজ সারার পরদিনই তৃণমূল নেতা ফরহাদ হাকিমের সঙ্গে এক বেসরকারী হাসপাতালের উদ্বোধনে সন্ত্রীক হাজির । জল্পনা আরও উস্কে দিতে মুখে সেই চেনা হাসি আর সুকৌশলে প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া । মেয়র হাকিমকে পাশে নিয়ে সৌরভের জবাব , “ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমার খুব কাছের মানুষ । ” এদিন বিশিষ্ট চিকিৎসক সরোজ মণ্ডলের যে হাসপাতালের উদ্বোধন করেছেন দু'জনে , সেই মঞ্চেই একে অপরের প্রশংসাতেও পঞ্চমুখ তারা । দু'জনেই একে অপরকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছেন । আর তা দেখার পর রাজনৈতিক বোদ্ধা মহলের বক্তব্য ভুলে গেলে চলবে না , নামটা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় । রাজনীতিতে কীভাবে ব্যালেন্স মেইন্টেইন করে চলতে হয় তা সৌরভ খুব ভালো মতোই জানেন ।অতীতে বামেদের সঙ্গে সৌরভের সুসম্পর্ক কারও অজানা নয় । তারপরে ঘাসফুল জমানায় সৌরভ যেন তৃণমূলনেত্রীর অত্যন্ত কাছের মানুষ । নবান্নতে বসে এই মমতাই সৌরভকে বসিয়েছিলেন সিএবির সভাপতির আসনে । আবার বিজেপির সঙ্গেও তার গলায় গলায় ভাব রয়েছে । কিন্তু , সৌরভ এখনই যে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে নামতে চলেছেন , এটা ভাবার কোনও কারণ নেই । অমিত শাহ যে তার বাড়িতে আসতে চলেছেন , সেটা তিনি নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়ে এসেছিলেন অযথা বিতর্ক এড়াতে । একবারে পোক্ত রাজনীতিবিদের মতোই , ক্ষমতাসীন দলের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কোনও ভুল বার্তা যাক , সেটা সৌরভ চান না , সে বিভিন্ন মহলে তাকে নিয়ে যতোই জল্পনার জলঘোলা হোক । রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের মতে ,সৌরভ সম্ভবত এখনই রাজনীতিতে আসতে চান না ক্রীড়া প্রশাসকের ভূমিকাকে সাইডে রেখে । এটা নিয়ে তিনি নিজেও চিন্তিত ছিলেন বোধহয় । সে কারণেই সম্ভবত , তার হৃদরোগের সমস্যাটা দেখা দিয়েছিল গত বছর । অসুস্থতা সারিয়ে উঠলেও , এ অবস্থায় তিনি নিজেও কতোটা রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে নামতে পারবেন , সে নিয়ে তো প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে । যদিও অনেকেরই বক্তব্য , সৌরভ এতোটাও কাঁচা খেলোয়াড় নন যে তিনি বাংলায় সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতায় নামবেন , তাও আবার এতো তাড়াতাড়ি । চব্বিশের লোকসভা ভোট এখনও অনেক দেরি , আর গঙ্গা গিয়ে অনেক জল গড়ানো বাকি । গেরুয়া , নাকি সবুজ শিবির— সৌরভ তুমি কার ? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আরও বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে ।

সম্পরকিত খবর