পরিসংখ্যানের বিস্তর ফারাক

পরিসংখ্যানের বিস্তর ফারাক

" হিসেবে বিস্তর গরমিল । আর তা নিয়েই ভারত সরকার আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার  মধ্যে বাগ্‌যুদ্ধ চরমে । সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিভিন্ন দেশে করোনা ভাইরাস সম্পর্কিত মৃত্যু সম্পর্কে, একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে।  গ্লোবাল হেলথের এই রিপোর্ট  দাবি করা হয়েছে ভারতে ১ জানুয়ারী ২০২০ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ , এই দুই বছরে প্রায় ৪.৭ মিলিয়ন অর্থাৎ ৪৭ লক্ষ মানুষের কোডিডে মৃত্যু হয়েছে । শুধু ভারতেই নয় , এই সময়ে গোটা বিশ্বে প্রায় ১৪.৯ মিলিয়ন অর্থাৎ ১ কোটি ৪৯ লক্ষ মানুষের প্রাণহানির কথাও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে । ' হু ' বলেছে করোনায় বিশ্বব্যাপী যত মৃত্যুর ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে , বাস্তবে সেই সংখ্যাটা তিনগুণ বেশি। ভারত সরকার ইতিমধ্যেই কোভিডে মৃত্যু নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টের বিরোধীতা করে বলেছে , বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভারতে কোভিডের মৃত্যু নিয়ে দিয়ে মায়েরা যে তথ্য প্রকাশ করেছে তা সবটাই অনুমান নির্ভর । এই তথ্য বাস্তবের সঙ্গে কোনও মিল নেই এবং যে পদ্ধতি মেনে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে । মধ্যেই কঠিন তার বৈধতা এবং ডেটা সংগ্রহের পদ্ধতি প্রশ্নবিহীন নয় । একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার একথাও জানিয়েছে , ভারতের জন্ম মৃত্যুর তথ্য ও রেকর্ড অত্যন্ত সচেতনভাবে বিধিবদ্ধ কাঠামো মেনে নথিভুক্ত করা হয় । তাই ভারত সরকারের তথ্যে ভূলের কোনও সুযোগ নেই । স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে চলতি বছরের ৩ মে পর্যন্ত ভারতে কোভিড আক্রান্ত হয়ে ৫ লক্ষ ২২ হাজার ৭৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে । ভারতে কোভিড মৃত্যু নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান ও তথ্যের মধ্যে এত আকাশ - জমিন ফারাক কিভাবে তৈরি হয়েছে সেটাই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি আলোচনার বিষয় । হু বলেছে যে , অতিরিক্ত মৃত্যুর এই সংখ্যাটা তারা নিরূপণ করেছে , মহামারির সময়ে ভারতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা এবং এর আগের বছর যখন বিশ্বে করোনার চিহ্নমাত্র ছিলো না সেই সময়ে মৃত্যুর সংখ্যার মধ্যে ব্যবধান বা পার্থক্য হিসাব করে । শুধু তাই নয় , বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান একথাও বলেছেন যে কোনও দেশকে খাটো করা নয় , বরং দেশটির স্বাস্থ্যব্যবস্থার ঘাটতিগুলো চিহ্নিত করে তাকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যেই এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে । লক্ষণীয় দিক হলো , বৃহস্পতিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বব্যাপী কোভিড মৃত্যু নিয়ে তাদের রিপোর্ট প্রকাশ করার পর এনিয়ে সর্বত্র হইচই পড়ে যায় । অথচ মাত্র দুই মাস আগেই বিশ্বের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেট তাদের প্রতিবেদনেও ভারতে করোনার মৃত্যু সরকারী পরিসংখ্যানের তুলনায় ৮ গুণের বেশি ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ল্যানসেট বলেছিল ভারতে লকডাউনের প্রথম পর্বের পর দ্বিতীয় পর্ব শুরু হতেই কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা মারাত্মক রূপ নেয় এবং এতে অন্তত ৪০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল যা পৃথিবীতে সব থেকে বেশি । মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক কিংবা মৃত্যুর সংখ্যায় গরমিল নিয়ে ভারত এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই মুহূর্তে সম্মুখসমরে । ইতিমধ্যেই নিউইয়র্ক টাইমস তাদের এক প্রতিবেদনে বলেছে , ভারতের তরফে অভিযোগ অস্বীকারের ফলে অতিমারিজনিত বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সংখ্যা প্রকাশ করার ‘ হু’র প্রচেষ্টা বাধাপ্রাপ্ত হবে । স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কাজে যুক্ত একটি মহল মনে করছেন পরিসংখ্যান ফারাকের একটি কারণ হলো , মৃত্যুর সময়কাল । বহু মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হয়ে সঙ্গে সঙ্গেই মারা গেছেন । আবার কোভিড থেকে সেরে উঠলেও ভাইরাসের ফলে তাদের দেহে মারাত্মক ক্ষতি ঘটে যায় । এর জেরে পরবর্তীতে তাদের মৃত্যু হয়। ফলে কোভিডে মৃত্যুর সরকারী তালিকা থেকে হয়তো এদের নাম বাদ গেছে ।এই ধরনের মৃত্যুর সংখ্যাটা হয়তো বেশি । পরিসংখ্যান ফারাকের কারণে বিতর্ক যাই হোক।ভারত ছাড়াও চিন , ইরান , বাংলাদেশ , সিরিয়া , ইথিওপিয়া এবং মিশর একই কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পেশ করা নিজ নিজ দেশের মৃত্যুর সংখ্যা এবং এই রিপোর্ট তৈরির পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে । কিন্তু এটা ঘটনা কোভিডে বাড়তি মৃত্যুর সংখ্যা কিংবা মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে এত বড় পরিমাণে গরমিল যা সরকারী তথ্য এবং ' হু'র প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে উঠে এসেছে তাতে একটা জিনিস পরিষ্কার , অকস্মাৎ ধেয়ে আসা কোভিড -১৯ - এর একের পর এক ঢেউ মোকাবিলা করার পরিস্থিতি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কোনও দেশের পক্ষেই সম্ভব ছিলো না । হু বলেছে ভারতে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় থেকেই মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায় । ২০২১ সালের প্রথমার্ধে শুরু হওয়া কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় অক্সিজেন সিলিণ্ডারের অভাবে রোগীদের অসহনীয় পরিস্থিতি এবং হাসপাতালের পর হাসপাতালে শয্যা সঙ্কটের ঘটনা তো কারোরই অজানা নয় । কিন্তু কোভিডের মৃত্যুর মিছিলে শীর্ষে থাকা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং পর্যায়ক্রমে ইউরোপ কিংবা আমেরিকায় যে দুর্ভোগ নেমে এসেছিল , আগামী দিনে বৈশ্বিক কোনও মহামারির ক্ষেত্রে মানবসভ্যতাকে যেন এরকম কোনও কঠিন অসহায় পরিস্থিতির মুখে পড়তে না হয় সেদিকেই রাষ্ট্রকে সর্বাগ্রে নজর দিতে হবে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই কথাই বারবার বলার চেষ্টা করেছে কোনর দেশের ব্যর্থতাকে তুলে ধরা নয় । বরং আগামীর প্রস্তুতি এবং স্বাস্থ্যসেবায় সর্বতোভাবে ঘাটতিগুলো দূর করতে পারলেই এই অতিমার থেকে মানব সভ্যতা বড় শিক্ষা নিতে পারবে । এই দৃষ্টিকোণ থেকেই সার্বিক বিষয়টিকে অনুধাবন করতে হবে সরকার ও রাষ্ট্রগুলিকে । আর সেটাই হবে মানবজাতির জন্য মঙ্গল ।

সম্পরকিত খবর