আচ্ছে দিনের বজ্রাঘাত

আচ্ছে দিনের বজ্রাঘাত

দৈনিক সংবাদ অনলাইনঃ  সঙ্কটকে স্বীকার না করা বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় সঙ্কট। এখানে সঙ্কট বলতে সমাজে মানুষের যেকোনো ধরনের দূরবস্থা, যন্ত্রনা, দুর্দশা, মর্মপীড়া, দুর্ভোগ, খারাপ অবস্থা সবকিছুই বোঝানো যায়। মানুষের এই দুর্দশা, ক্লেশ, দুঃখ, অভাব, দইন্যতা- তা সে যে নামেই অভিহিত করা হোক  না কেন, এই দুঃখের কারণগুলো দূর করার দায়িত্ব আধুনিক উন্নত সমাজে রাষ্ট্র অর্থাৎ দেশ পরিচালনার যে কারিগর সে সরকারের উপরেই দায়িত্ব ন্যস্ত। কিন্তু এটাই আমাদের ক্টহোর দুর্দশা তথা দুর্ভাগ্য যে, যখনই কোনও সঙ্কট মানুষের সামনে এসে দেখা দেয় সরকার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সমস্যা নিরসন করা দূরে থাকুক, মুহূর্তে এই সঙ্কট থেকে নিজের হাত ধুয়ে ফেলে নিজ দায়িত্ব কাঁধ থেকে ঝেরে ফেলে দেয়। আসলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকার রাজনৈতিক চিন্তা থেকেই পরিস্থিতিটা স্বীকার করতে চায়না। সেটা আইন শৃঙ্খলার অবনতি হোক , অর্থনৈতিক সঙ্কট হোক কিংবা হোক মূল্যবৃদ্ধির দুর্বিষহ পরিস্থিতি। বর্তমান সময়ে দেশজুড়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এবং খাদ্যসামগ্রীর লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি এই কঠিন সঙ্কটের মধ্যেই দেশবাসীকে এনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। বল্গাহীনভাবে মানুষের উপর দিয়ে ছুটে চলেছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির ঘোড়া। জীবনধারনের উপযোগী প্রতিটি জিনিসের আজ অগ্নিমূল্য। চাল-ডাল, মাছ-মাংস, চিনি-লবন, সবজি-ফলমুল, গম-আটা, বিস্কুট-রুটি, পেত্রোল-রান্নার গ্যাস, সব পণ্যের মূল্য আগের তুলনায় ছয়গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষ বিশেষ করে দিনহাজিরা, খেঁটে খাওয়া গরিব মানুষের বেঁচে থাকাটাই আজ বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আচ্ছে দিনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা সরকার আজ মানুষের জীবনকে শ্রীহীন করে তুলেছে। অভাব আর দারিদ্রের কশাঘাতে আজ জনজিবন দুঃখ আর হাহাকারে ডুবে গেলেও ক্ষমতায় মধুভান্ড যারা ভাগ করছেন তাদের সঙ্গে মিশে গিয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রের আঙুলে গোনা কিছু ক্ষমতাবান মানুষ অসৎ উপায়ে স্বল্প সময়ের মধ্যে ধনী হওয়ার জন্য অন্যায়কে মুখ বুজে হজম করছেন। প্রতিবাদ-প্রতিরোধকে পাপোশের নিচে চাপা দিতে অন্যায়ের দঙ্গে আপস করে মানুষের দুঃখ যন্ত্রণাকে আরও চরম পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছেন। নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ তৈরি করা হচ্ছে তাকে ভাষা দেওয়ার জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং জনমত গঠন করার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার যে ভূমিকা থাকার কথা ছিল, সাধারণ মানুষ সেটা দেখতে পাচ্ছেন না। এই অসহায়ত্ব, সরকারের কাছে জবাবদিহি না থাকার বিষয়টি সাধারণ মানুষের কাছে এখন অনেকটা বজ্রাঘাতের মতোই দেখা দিচ্ছে। আর এর সুযোগ নিয়ে সরকার এবং ক্ষমতার যারা নিয়ন্ত্রকশক্তি তারাই এখন দেশের মানুষের ভাগ্যবিধাতা সেজে গেছেন। ফলে সরকার ও ক্ষমতাসীন নেতা-মন্ত্রীরা এবং ক্ষমতা বহির্ভূত অদৃশ্য এক শক্তি যেভাবে বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন, সেভাবেই জিনিসপত্রের দাম ওঠানামা করছে। প্রশাসন ও পুলিশকে দিয়ে মুদ্রাস্ফীতি এবং মূল্যবৃদ্ধির দূর্বার গতি রোধ করার পরিবর্তে শাসক এখন নিজের রাজনৈতিক সুবিধার কথা মাথায় রেখে নির্বাচনে তহবিল স্ফীত করার লক্ষ্যে শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, আমদানিকারক্সহ সমস্ত বিজনেস টাইকুনদের নিজের পদানত করেই একের পর এক এই অপকর্ম সম্পন্ন করে চলেছে। শুধু ভোগ্যপণ্য কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রই নয়, মানুষের বেঁচে থাকার শেষ সম্বল জীবনদায়ী ওষুধের ক্ষেত্রেও আচ্ছে দিনের সরকার এবার ১০ থেকে ১২ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি করেছে। আসলে দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি সবটাই সরকারের মস্তিষ্কপ্রসূত এবং ছককষা। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে, নিম্ন আয়ের মানুষ যা আয় করছেন তার পুরোটাই জীবনধারণের জন্য ন্যূনতম খাদ্যদ্রব্য ক্রয়ের পেছনে খরচ করেও সবটা প্রয়োজন তাদের মিটছে না। স্বাস্থ্য- চিকিৎসা- শিক্ষা এসবতো তাদের কাছে এখন বিলাসিতা। দ্রব্যমূল্যের এই বল্গাহীন ঢেউয়ে সবচেয়ে কঠিন জীবনযুদ্ধে পড়েছেন অসংগঠিত শ্রমিক, মেহনতি মানুষ, মজুর, দৈনিক হাজিরার শ্রমিক, বেসরকারী সংস্থার কর্মী, প্রবীন মানুষ আর নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষেরা। মাত্র বছর দুই আগে কোভিড-১৯ আমাদের আর্থিক বুনিয়াদকে বড়সড় ধাক্কা দিয়ে জীবনের পথ চলাকে অনেকটাই সমস্যাসঙ্কুল এবং কঠিন করে তুলেছিল। সেই ঝড়ের মুখে দাঁড়িয়ে নিত্যপন্যের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে এবার আরও অসম যুদ্ধে লড়তে হচ্ছে মানুষকে। দুর্ভাগ্যের হলেও এটাই সত্যি, এই লড়াইয়ে অমানবিক সরকার এবং প্রশাসন নানা অজুহাতে সঙ্কটকে স্বীকার না করে তা থেকে বিপন্ন মানুষকে রক্ষার কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এটা বড় সুখের সময় নয়। বরং এটাই আগামীর জন্য ভয়ঙ্কর দিনের পূর্বাভাস।

সম্পরকিত খবর