জল পান করার সঠিক নিয়ম

জল পান করার সঠিক নিয়ম

দৈনিক সংবাদ অনলাইনঃ  সময় মতো জল অনেকেই পান করেন না । যার কারণে অনেক সমস্যাই দেখা যায় । আপনারা জানেন , আমাদের শরীরের ষাট শতাংশই জল থাকে । এই পরিমাণ জলই আমাদের শরীরকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে । এই পরিমাণ জলের ঘাটতি যদি আমাদের শরীরে দেখা দেয় তখনই সমস্যা তৈরি হয় । তাই আমাদের জেনে রাখা প্রয়োজন কতটা পরিমাণ জল আমাদের পান করা উচিত আর কখন পান করা উচিত । কিন্তু এই বিষয়টা না জেনেই অনেকেই জল পান করে নেন । সব সময় আপনাকে মাথায় রাখতে হবে যে , খাবার খাওয়া , শ্বাস নেওয়ার মতোই গুরুত্বপূর্ণ জল পান করাটাও । যে ভুলটা করবেন না সবার প্রথমে মাথায় রাখবেন , খাবার খাওয়ার মাঝে কখনও জল খাবেন না । এতে আপনার খাবার ঠিক ভাবে হজম হবে না । তাই খাবার খাওয়ার আধ ঘণ্টা আগে জল পান করবেন । আর খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা অথবা নব্বই মিনিট পর জল পান করবেন । এতে আপনার খাবার ঠিকঠাক মতো হজম হবে । তবে খাবার খাওয়ার সময় লিক্যুইট জাতীয় কিছু পানীয় অবশ্যই পান করা উচিৎ । যেমন- লেবুর শরবত , দইয়ের শরবত ইত্যাদি । তবে মনে করে , জল কখনওই খাবেন না । জল কখন খাবেন , এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । জেনে রাখুন , জল কিন্তু তখনই পান করবেন যখন আপনার তেষ্টা পাবে । যদি আপনি তেষ্টা না পেলেও জল পান করেন তখন কিন্তু আপনার শরীরে সমস্যা তৈরি হয় । আজকাল অনেকেই বেশি করে জল পান করতে গিয়ে দশ থেকে বারো গ্লাস বা তার বেশি জল সারাদিনে পান করে ফেলছেন । অতিরিক্ত জল পান করাটাও কিন্তু আপনার শরীরে ক্ষতি করে । অতিরিক্ত জল পান করলে আপনার কিডনির ওপর চাপ পড়ে । মনে রাখবেন , যদি আপনি তেষ্টা না পেলে জল পান করছেন তাহলে আপনার শরীরকে কিন্তু আপনি জোর করছেন । যেটা করা একদমই উচিত নয় । অতিরিক্ত জল পান করলে হাইপোনাট্রেমিয়া হতে পারে । মানে আপনার রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কমে যেতে পারে । এর ফলে আপনার মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় সমস্যা তৈরি হতে পারে । তবে মস্তিষ্ক ছাড়াও লিভার কিডনি , ব্লাড প্রেসারের সমস্যা দেখা দিতে পারে । তৃতীয় ভুল যেটা বেশিরভাগ জনই করে থাকে সেটা হল , ঠান্ডা কনকনে জল পান করা । যদি আপনি সাধারণ তাপমাত্রায় থাকা জল পান করেন তাহলে সেই জল পাকস্থলি হয়ে ক্ষুদ্রান্তে পৌঁছতে কুড়ি মিনিট মতো সময় লাগে । যদি আপনি ঈষদুষ্ণ গরম জল পান করেন তাহলে সাত থেকে দশ মিনিট মতো সময় লাগে পাকস্থলি থেকে জল ক্ষুদ্রান্তে পৌঁছতে । কিন্তু যদি আপনি বরফের ঠান্ডা কনকনে জল পান করেন তাহলে সেই জলটাকে শরীর অনেক শক্তি ক্ষয় করে আগে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় নিয়ে আসে তারপর সেটা ক্ষুদ্রান্তে পৌঁছায় । আয়ুর্বেদ অনুসারে , কনকনে ঠান্ডা জল পান করার কারণে কিন্তু আপনার পাকস্থলির কার্যকারিতা অনেক ধীর গতিতে হয় । আর এর ফলে আপনার খাবার হজম হতে অনেক সময় লাগে , যার কারণে অনেক সমস্যা শরীরে দেখা দেয় । মনে রাখবেন , ঈষদুষ্ণ গরম জল পান করা কিন্তু আপনার শরীরের জন্য খুব ভাল । এতে আপনার হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় । তাই যখনই আপনি আইসক্রিম বা ঠান্ডা জাতীয় পানীয় পান করছেন তখনই কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে ঈষদুষ্ণ গরম জল পান করবেন । আরও একটা বিষয় মনে রাখবেন , জল কিন্তু কখনওই দাঁড়িয়ে পান করবেন না । এতে খুব তাড়াতাড়ি জল পাকস্থলি থেকে ক্ষুদ্রান্তে পৌঁছে যায় । তাই যখনই জল পান করবেন তখন বসে পান করবেন । বসে জল পান করলে আপনার পেশি , পেট সব কিছুই রিল্যাক্সে থাকে । এতে খুব সুন্দর ভাবে শরীরের সমস্ত সিস্টেমে জল কাজে আসে । তাই শান্ত ভাবে বসে জল পান করুন । অনেকেই আরও একটি ভুল জল পান করার সময় করে থাকেন সেটা হল— ঢকঢক করে এক নাগাড়ে জল পান করা । প্রচণ্ড জল তেষ্টা পেয়েছে বলে বোতল খুলে এক গালে ঢকঢক করে জল ঢেলে দেওয়াটা শরীরের ক্ষতি করে । এতে একসঙ্গে অনেকটা করে জল শরীরে প্রবেশ করে । যার ফলে জিভের লালার সঙ্গে সঠিক পদ্ধতিতে জল মিশতে পারে না । ফলে শরীরে অ্যাসিডজনিত সমস্যা দেখা যায় । গ্লাসে করে জল নিয়ে ধীরে ধীরে জল পান করাটাই সঠিক পদ্ধতি । এতে জিভের লালার সঙ্গে সঠিক পদ্ধতিতে জল মিশতে পারে । আর এর ফলে খাবার হজম ঠিকঠাক ভাবে হয় এবং শরীরও হাইড্রেট থাকে ।

সম্পরকিত খবর